গ্যালিলিও যাদুঘর / Photo credit: wikimedia.org |
জ্যোতির্বিজ্ঞানী
গ্যালিলিও গ্যালিলির ডানহাতের মধ্য আঙ্গুলটি ফ্লোরেন্সের গ্যালিলিও যাদুঘরে সংরক্ষিত
আছে। যাদুঘরটির পূর্বের নাম ছিল হিস্ট্রি অব সায়েন্স যাদুঘর। ২০১০ সালের জুন মাসে
গ্যালিলিওর দুটি আঙ্গুল ও একটি দাত যাদুঘরে স্থাপনের মাধ্যমে যাদুঘরটিকে গ্যালিলিও যাদুঘর
নামকরণ করা হয়।
আপনার মনে নানা প্রশ্ন আসতে পারে, গ্যালিলিওর মৃত্যুর প্রায় ৪ শত বছর
পরে কেন এই সংরক্ষণ? ২০১০ সালের আগে তার দাত ও আঙ্গুলগুলো কোথায় ছিল? আসুন একটু বিস্তারিত
জানার চেষ্টা করি।
গ্যালিলিও গ্যালিলি/ Photo credit: wikimedia.org |
গ্যালিলিও ১৫৬৪
সালে ইতালির পিসা শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হলেন আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের এবং আধুনিক বিজ্ঞানের অন্যতম একজন জনক। গ্যালিলিও ছিলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তার আবিষ্কৃত
দূরবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠদেশ, জুপিটারের চারটি বৃহৎ উপগ্রহ এবং সৌর কলঙ্ক দেখতে সক্ষম হয়েছিলেন। গ্যালিলিও কোপারনিকাসের মতবাদে বিশ্বাস করেছিলেন এবং
বলেছিলেন, "সূর্য সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে"।গ্যালিলিও
ধর্মীয় দিক থেকে ছিলেন ক্যাথলিক খ্রিস্টান। কিন্তু ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের ধর্মীয় শিক্ষানুযায়ী, "পৃথিবী সৌরজগতের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং সূর্য ও অন্যান্য গ্রহগুলো পৃথিবীর চারিদিকে ঘোরে"। তখনকার দিনে ক্যাথলিক চার্চ ছিল সবচেয়ে শক্তিশালী। গ্যালিলিওর
এই মতবাদ, ক্যাথলিক শিক্ষার পরিপন্থী ঘোষণা করা হয়েছিল এবং ক্যাথলিক চার্চের আইনে তাকে
মারাত্মক দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। ১৬৩৩ সাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাকে আজীবন গৃহবন্দী
করে রাখার শাস্তি প্রদান করা হয়।
১৬৪২ সালে বিখ্যাত
এই পদার্থ বিজ্ঞানী গৃহবন্দি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন । যাজক সম্প্রদায়ের তোপের মুখে ফ্লোরেন্সের সান্তা ক্রস চার্চের বিখ্যাত ব্যক্তিদের কবরের পাশে গ্যালিলিওর মৃতদেহটি স্থান পায়নি।
মৃত্যুর ৯৫ বছর পর ১৭৩৭ সালে গ্যালিলিও তার প্রাপ্য সম্মান ফিরে পান। তার কবরটিকে সান্তা
ক্রস চার্চে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং মাইকেল অ্যাঞ্জেলোর
কবরের বিপরীত পাশে সমাহিত করা হয়। গ্যালিলিওকে সম্মান প্রদর্শনপূর্বক স্মরণীয় করে রাখতে
কবর স্থানান্তরের সময় তার লাশ থেকে ডান হাতের তিনটি আঙ্গুল, একটি দাত এবং মেরুদন্ডের
একটি হাড় কেটে নেয়া হয়েছিল। একটি আঙ্গুল এবং মেরুদন্ডের হাড়টি পাদুয়া এবং ফ্লোরেন্সের যাদুঘরে মমি করে সংরক্ষিত করা হয়েছিল। কিন্তু বাকি
দুটি আঙ্গুল (একটি মধ্য আঙ্গুল ও একটি বৃদ্ধাঙ্গুল) এবং একটি দাত হারিয়ে গিয়েছিল। হারিয়ে
যাওয়া দাত ও আঙ্গুলগুলো গ্যালিলিওপ্রেমী মানুষের হাতে স্থানান্তরিত হয়। অবশেষে ইতালির
একজন ব্যাক্তি তার বাড়িতে কাচের ফুলদানির ভিতরে কাঠের কেসের উপর দাত ও আঙ্গুলগুলো রেখে
দিয়েছিলেন। শত শত বছর ধরে থাকা ঐ বাড়ির কাচের ফুলদানিতে কি ছিল তা বাড়ির নতুন প্রজন্মের
কাছে অজানা ছিল। অবশেষে পরিবারটি পুরোনো ফুলদানিটি বিক্রির উদ্দেশ্য ২০০৯ সালে নিলামে
তোলেন। আলবার্টো ব্রুশি নামক ফ্লোরেন্সের বিখ্যাত শিল্প সংগ্রাহক ১৭ শতকের ঐ কাচের
ফুলদানিটি ২০০৯ সালের অক্টোবরে নিলামে ক্রয় করেন। কিন্তু তিনি জানতেন না যে, তাতে গ্যালিলিওর
দাত ও আঙ্গুল সংরক্ষিত ছিল। এরপর ব্রুশি ও তার কন্যা বিভিন্নভাবে এর সম্পর্কে জানার
চেষ্টা করেন এবং তারা হিস্ট্রি অব সায়েন্স যাদুঘরের (বর্তমান নাম গ্যালিলিও যাদুঘর) পরিচালকের লেখা একটি বই পড়ে গ্যালিলিওর
কবর স্থানান্তরের সময় দেহের অংশ কাটার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেন। পরে ব্রুশি যাদুঘরের
পরিচালককে তাদের কেনা ফুলদানিটি সম্পর্কে জানান। যাদুঘর কর্তৃপক্ষ সব ধরনের পরীক্ষা
নিরীক্ষা শেষে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, সেটা ছিল গ্যালিলিওর হারিয়ে যাওয়া দাত ও আঙ্গুল। অবশেষে
গ্যালিলিওর মৃত্যুর ৪ শত বছর পরে তার দাত ও বৃদ্ধাঙ্গুলসহ মধ্যআঙ্গুলটি ২০১০
সালের জুন মাস থেকে এখনও গ্যালিলিও যাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
গ্যালিলিও গ্যালিলি সংরক্ষিত মধ্য আঙ্গুল/ Photo credit: wikimedia.org |
এমন আরও আশ্চর্যজনক সত্য ঘটনা জানা থাকলে নিচে কমেন্ট করুন????
Source: theguardian, phys.org, reuters.com, dailymail.co.uk, en.wikipedia.org, commons.wikimedia.org
Categories:
আশ্চর্যজনক সত্য
জ্ঞান দৈনন্দিন
0 comments: